যে অবৈধ কাজ করছেন ইডেন কলেজের সুন্দরী ছাত্রলীগ নেত্রী
নরসিংদীর মনোহরদীতে উম্মে হানি লাবনী নামের এক সহকারী শিক্ষক বিদ্যালয়ে না
গিয়েই সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। আড়াই বছর যাবৎ তিনি উপজেলার
উত্তর পীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে কর্মরত আছেন। উম্মে
হানি ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রলীগ শাখার নেত্রী। তাকে ঢাকায় বিভিন্ন
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়। প্রায়ই ইডেন কলেজের হলে ফিরেন মধ্যরাতে। তার
ভয়ে তটস্থ কলেজ অধ্যক্ষসহ অনেকেই। তার বিরুদ্ধে উচ্ছৃংখল জীবন-যাপনে
অভ্যস্থ থাকার অভিযোগ সহপাঠীদের। জুনিয়রদের নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত করতে
বাধ্য করানোর অভিযোগ রয়েছে উম্মেহানীর বিরুদ্ধে।
অতি সম্প্রতি ইডেন কলেজের
জুনিয়র কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে তিনি সোনারগাঁও হোটেলে সময় কাটিয়েছেন
নোয়াখালী অঞ্চলের প্রভাবশালী এক এমপি ও এক সাবেক ছাত্রনেতার সঙ্গে। উপজেলা
শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের নির্দেশে উম্মেহানীর জন্য আলাদা হাজিরা
খাতায় মাস শেষে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও
বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উম্মে হানি খিদিরপুর
ইউনিয়নের ডুমনমারা গ্রামের রবিন মাস্টারের মেয়ে। ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর
তিনি পীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
যোগদানের ২৮ দিনের মাথায় ১০ অক্টোবর প্রেষণে (ডেপুটেশন) উত্তর পীরপুর
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি প্রতি মাসের
শেষের দিকে দু-এক দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের
স্বাক্ষর করেন। বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকাকালে তিনি কোনো ক্লাসও নেন না। শুরুর
দিকে বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আল আজাদ তৎকালীন উপজেলা সহকারী
শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) ফাতেমা হক ওরফে রুনাকে (বর্তমানে ময়মনসিংহের
গফরগাঁও উপজেলায় কর্মরত) অবহিত করলে তিনি উম্মে হানির স্বাক্ষর আলাদা খাতায়
নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এই সহকারী শিক্ষকের বিষয়ে সহকর্মীদের কোনো
মন্তব্য করতে নিষেধ করা হয়। রোববার বিকেলে বিদ্যালয়ের গিয়ে হাজিরা খাতায়
গত ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত উম্মে হানির স্বাক্ষর পাওয়া যায়। ওই সময় শিক্ষকেরা
তাঁর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উম্মে হানি রাজধানীর ইডেন
মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের নেত্রী বলে তাঁরা জানান। কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন
কিংবা কোন বর্ষে পড়ছেন, তা-ও বলতে পারেননি উপস্থিত শিক্ষকেরা। এ ব্যাপারে
প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘উম্মে হানি কোনো মাসে দু-এক দিন
আসেন, আবার কোনো মাসে আসেন না। বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সাতজন শিক্ষকের বিপরীতে সাতজনই আছেন।
উম্মে হানিসহ আটজন।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘প্রথম
কয়েক মাস আমি বেতনের কাগজে উম্মে হানির কাগজে স্বাক্ষর করিনি। কিন্তু ঠিকই
তিনি বেতন উত্তোলন করেছেন। কীভাবে হয়েছে জানি না।’ উম্মে হানির ব্যবহৃত
মুঠোফোনে তিন-চারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খুদে
বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা
কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু তিনি প্রেষণে শিক্ষক হিসেবে
আছেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর আলাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া সঠিক। তবে
অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয়ে না আসার বিষয়টি জানা নেই। এমনটি হলে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’